সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

এ যেন আরেক আসমানী জীবন : রহিমা বেগম কিভাবে কাটায় শীত আর বর্ষা

এ যেন আরেক আসমানী জীবন : রহিমা বেগম কিভাবে কাটায় শীত আর বর্ষা

রহিমা বেগমকে সহায়তা দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন।

পল্লী কবি জসিম উদ্দিন আসমানী কবিতায় লিখেছেন

“ আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,

রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।

বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি,

একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।

একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,

তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।

পেটটি ভরে পায় না খেতে, বুকের ক’খান হাড়,

সাক্ষী দেছে অনাহারে কদিন গেছে তার।

মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি

থাপড়েতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি।

পরণে তার শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস,

সোনালী তার গার বরণের করছে উপহাস।

ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,

সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রæ রাশি রাশি।

বাঁশীর মত সুরটি গলায় ক্ষয় হল তাই কেঁদে,

হয়নি সুযোগ লয় যে সে-সুর গানের সুরে বেঁধে।”

কবির এ লেখনির সাথে হুবহু মিল পাওয়া যাবে যদি রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের জীবনদাসকাঠি গ্রামে রহিমা বেগমের বাড়িতে যান।

“রহিমা ও আব্দুল মান্নাফ দম্পতির দাম্পত্য জীবনে ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে। বিষখালী নদীর তীরে বসবাস করায় ছোট বেলা থেকে এ দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান মাছ ধরে সংসারে বাবার সাথে সাহায্য করতো। সেই ছেলেটি ২০ বছর পূর্বে ২০ বছর বয়সে সংসারের বাড়তি উপার্জনের জন্য সাগরে মাছ ধরতে যায়। সেই যে গেলো আর ফিরে এলো না।

বয়সের ভারে আব্দুল মান্নাফ (৮০) ন্যুজ হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক চলাফেরাও করতে না পারায় শুয়ে বসেই দিন পার করেন বৃদ্ধ মান্নাফ। ৩ মেয়েকেই পাত্রস্থ করেছেন। তবে গরীব পরিবারের জামাই তো গরীবই থাকে। জামাইরাও তো টেনেটুনে সংসার চালায়। ছোট মেয়েটা আমার কাছে থাকে, ওর স্বামী বাসের হেল্পার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে, রাস্তার পাশে মাটি দেয়ার কাজ করাসহ যখন যে কাজ পায় তাই করে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগার করতেই কষ্ট হয়। অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসা এবং ওষুধ খরচ মেটানো অনেক কষ্টসাধ্য বিষয়। ঘরের অবস্থাও অনেক খারাপ।

বাতাস এলেই ঘরটি নড়তে থাকে, ভয়ে থাকি কখন যেন মাথা গোজার শেষ আশ্রয়টুকু ভেঙে পড়ে যায়। বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে পানি পড়ে ভিজে যায় সবকিছুই। শীতের সময় এলে শীতবস্ত্র ও শীত নিবারণের কোন গরম কাপড় না থাকায় চটের বস্তা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে হয়। খাবার ব্যবস্থা ও স্বামীর ওষুধের খরচ মিটালে অন্যদিকে টাকা খরচের আর কোন উপায় থাকে না।” এমন কথা গুলোই আবেগাপ্লুত হয়ে জানালেন রহিমা বেগম।

রাজাপুর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ আলআমিন বাকলাই জানান, বুধবার দাপ্তরিক কাজে গিয়েছিলাম জীবনদাশকাঠি। সেখানে দেখা হলো রহিমা বেগমের সাথে। অচল স্বামীকে নিয়ে এই ঘরে বসবাস করেন। আমরা যারা দালান-কোঠা, ইট-পাথরে থেকে শীত আটকাচ্ছি একবারও কি ভাবছি এদের শীত কেমনে কাটছে,আসছে বর্ষাকাল কেমনে কাটবে।

রাজাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) অনুজা মন্ডল জানান, যাদের সুযোগ আছে এইসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করবার, তাদের উচিত সরাসরি সেই দপ্তরকে জানানো। কারন, সারাদিনের অফিসিয়ালি ব্যস্ততায় বাড়তি নজর দেওয়ার সুযোগ না ও হতে পারে। সরাসরি জানানোটা অনেক দ্রæততর, সহজ এবং সুবিধাজনক পন্থা বলেই মনে হয়।

শুক্রবার সকালে গালুয়া ইউনিয়নের জীবনদাসকাঠী গ্রামের রহিমা বেগমের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, নুডলস ও অন্যান্যসহ ১ বস্তা খাদ্যপণ্য এবং ২টি কম্বল উপহার দেন রাজাপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মোক্তার হোসেন।

রহিমা বেগম জানান, সকালে রাজাপুরের স্যারে এসে ২টি কম্বল, ১ কেজি চাল, ১প্যাকেট ডাল, ১ প্যাকেট চিনি, ১ প্যাকেট লবণ, ২ প্যাকেট চিড়া ও ২ প্যাকেট নুডল্স দিয়ে গেছেন আর বলেছেন ঘর আসলে একটি ঘর দিবেন।

রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন জানান, আমি রহিমা বেগমের অসহায় জীবনযাপনের বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা ত্রাণ তহবিল থেকে যতটুকু সম্ভব তার বাড়িতে গিয়ে তাকে সহায়তা করেছি। রহিমা বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নিয়ে এসেছি, যদি ঘরের জন্য আগের তার আবেদন করা থাকে তাহলে যাচাই করে আর না থাকলে নতুন করে আবেদন করিয়ে পরবর্তিতে সরকারী ঘর বরাদ্ধ এলে প্রক্রিয়া অনুযায়ী তাকে একটি ঘর দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




Archive Calendar

Mon Tue Wed Thu Fri Sat Sun
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  




All rights reserved@KathaliaBarta 2023
Design By Rana